৯০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে!

৯০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে!

তাজা খবর:

এক দিকে করোনা অন্য দিকে শিক্ষক সঙ্কট। আবার দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষায় গতি ফেরাতে সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনার পর বিভিন্ন পর্যায়ে শূন্যপদে ৯০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে । ইতোমধ্যে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। করোনা কিছুটা কমে এলে শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অন্য দিকে বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্যও চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা মার্চের শুরুতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্য দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করা হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থাতেও নিয়োগসংক্রান্ত টেকনিক্যাল কাজ আমরা এগিয়ে রেখেছি। ইতোমধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ শেষ। পরীক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাথে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবার প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়োগ পাবেন ২৫ হাজার ৬৩০ জন। বাকিরা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক। এই নিয়োগের জন্য ১৩ লাখ ৫ হাজারের বেশি আবেদন পড়ে।

এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের শূন্যপদ অর্ধ লাখের বেশি। শিক্ষকের এই সঙ্কট নিয়েই করোনার আগে থেকেই চলছে দেশের হাজারো প্রতিষ্ঠান। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম পুরো শিক্ষাকার্যক্রম। যদিও করোনার আগেই নিয়োগের জন্য এই শিক্ষকদের তালিকা হালনাগাদ করছে এনটিআরসিএ। শিগগিরই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, এনটিআরসিএর কাছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শূন্য শিক্ষক পদের যে খসড়া তালিকা এসেছিল সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় বাদেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদরাসার দাখিল আলিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৬০ হাজারের ওপরে।

অন্য দিকে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ২৮ হাজার ৮৩২টি। সব মিলিয়ে স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসার বিভিন্ন পর্যায়ে শূন্য শিক্ষক পদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুর দিকে সরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের সহায়তায় স্বতন্ত্র একটি সফট্ওয়ারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষকের শূন্যপদের তালিকা এনটিআরসিএতে প্রেরণ করেছে। সেই তালিকা ধরেই এখন পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এনটিআরসিএর উপ-পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মো: শাহীন আলম চৌধুর জানান, সারা দেশ থেকে আমরা যে তালিকা পেয়েছি সেটি এখন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে তালিকার বাইরেও অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ নতুন করে শূন্য হচ্ছে। সেগুলোও পরবর্তীতে সংযোজিত করা হবে।

প্রসঙ্গত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করে এনটিআরসিএ। বাছাই করা প্রার্থীদের আর কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। ইতোমধ্যে দু’টি চক্রে ২০১৬ এবং ও ২০১৯ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তৃতীয় চক্রে শিক্ষক নিয়োগ দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে এনটিআরসিএ।

সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের আলোকে করোনার সংক্রমণ কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে মামলার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে এনটিআরসিএ। মতামত পেলেই শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে। সূত্র জানায়, সারা দেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৭ হাজার ৩৬০টি শূন্যপদ রয়েছে। মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে এ তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান মো: আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, ৫৭ হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও নিয়োগ দিতে পারছি না। তবে ৫৫ হাজার পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মতামত পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন জানান, ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রায় দুই হাজার প্রার্থী মামলা করে তাদের পক্ষে রায় এনেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল করেছে এনটিআরসিএ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৭ হাজার শিক্ষকের শূন্যপদের মধ্যে দুই হাজার বাদ দিয়ে বাকি ৫৫ হাজার পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক এনটিআরসিএ কাজ শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *