আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না: প্রধানমন্ত্রী

আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না: প্রধানমন্ত্রী

তাজা খবর:

দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে বরং দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। দুর্ঘটনা একটি দুর্ঘটনাই। এর জন্য কে দায়ী তা পরে খুঁজে বের করা যাবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।

বুধবার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে- শাহজালাল বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস; সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক এবং রাঙামাটি জেলার নারিয়ারচরে চেংগী নদীর উপর ৫শ’ মিটার দীর্ঘ সেতু। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ এবং ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড এই নির্মাণের সাবিক তত্ত্বাবধানে ছিল।

২০১৯ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যায় শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজিব ও দিয়া খানম মিম এর প্রাণ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক নির্দেশে সেখানে অত্যাধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী রাজিব ও মিম-এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে, কোনো ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলেই আগে ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যাই করা হয়।

সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে এটা কেন, কিভাবে, কার কারণে ঘটল সেটা বিবেচনা করবেন।

তিনি বলেন, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সকলের জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলতে হবে। মোবাইল ফোন কানে নিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে, বা রেল লাইনের পাশ দিয়ে চলা বা পার হতে যাবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, যেখানে সেখানে দিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। এভাবে রাস্তা পার হতে গেলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে! কাজেই এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ফুটপাতে হাঁটলে যেদিক থেকে গাড়ি আসছে তার উল্টো দিকেই হাঁটতে হয়। ফুটওভার ব্রিজ এবং আন্ডারপাস বা নির্দিষ্ট স্থান দিয়েই পারাপার হতে হবে। কারণ একটি যানবাহনে চাইলেই অনেক সময় হঠাৎ ব্রেক করা সম্ভব হয় না। কারণ এটা যান্ত্রিক বিষয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আমি বলব, রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক আইন মানতে হবে। আর শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া উচিত। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, স্কুল ছুটি এবং শুরুর সময় প্রত্যেকটি স্কুল নিজ উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে সহযোগিতার জন্য কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে সচেতন হতে হবে এবং তাদেরও লোক রাখতে হবে। যাতে ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। কারণ, অনেক সময় অন্যের কথা তারা শুনতে চায় না। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ থাকলে তার কথা ছাত্র-ছাত্রীরা শুনবে। এ ব্যাপারে আমি মনে করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা স্কুলকে নির্দেশ দিতে পারে। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলব, এ ব্যাপারে আপনারা উদ্যোগ নেবেন এবং প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই নির্দেশনা দেবেন। তাহলেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। এছাড়া আমাদের ভারী যানবাহনগুলো বিশেষ করে বাস, ট্রাক, লরি সেগুলোরও যান্ত্রিক কোনো ক্রুটি আছে কিনা সেটাও সবসময় পরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টাও সকলে নজর রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা। কাজেই, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে মারা উচিত নয়।

তিনি উদাহরণ দেন, দুর্ঘটনায় কোনো গাড়ির ধাক্কায় পথচারী পড়ে গেলে অনেক সময়ই তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটানোর কারণে ড্রাইভার প্রাণভয়ে ভীত হয়ে গাড়ি যখন পুনরায় টান দেয় তখন ঐ দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি চাকার নিচে চলে আসে। তার জীবন চলে যায়। কাজেই কিছু হলেই গাড়ির ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন এটা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টা দেখবেন। কাজেই এ বিষয়ে আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা প্রকল্প প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন। গণভবন প্রান্তে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *