এশিয়ার সর্ববৃহৎ সমন্বিত পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

তাজা খবর:

এশিয়ার সর্ববৃহৎ সমন্বিত পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে রাজধানীর দাশেরকান্দিতে নির্মিত এই প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন তিনি। একই সঙ্গে রাজধানীর পাগলার পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তিনি।

ঢাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় পুরো রাজধানীকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে অত্যাধুনিক পরিবেশবান্ধব পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করতে সরকারের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে এই পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।

এর ফলে রাজধানী থেকে যেসব পয়ঃবর্জ্য আশপাশের নদীনালা-খাল-বিলে পরে দূষিত হতো, তা আর হবে না। দাশেরকান্দিতে সমন্বিত পয়ঃশোধনাগার ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, সরকারের মাস্টার প্ল্যানে ঢাকা মহানগরীকে ৫টি (পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর) ক্যাচমেন্টে বিভক্ত করা হয়েছে। এই পাঁচটি প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী শতভাগ উন্নত ও টেকসই পয়ঃসেবা নিশ্চিত হবে।

এই প্ল্যানের অংশ হিসেবে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধারা,বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রাবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাতারকুল এবং হাতিরঝিল এলাকার সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিস্কাশিত হওয়ার মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ করা হবে। এছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধানাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্ট শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ কমানো সম্ভব হবে।

আর পাগলার পয়ঃশোধনাগার (কলাবাগান, মগবাজার, শাহবাগ, ইস্কাটন, আরামবাগ, পল্টন, সায়দাবাদ, মতিঝিল, রামপুরা, তালতলা, বাসাবো, গোলাপবাগ, আহমেদবাগ, শহীদবাগ, গোরান, বেগুনবাড়ি, খিলগাঁও, পশ্চিম নন্দীপাড়া) এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলেও জানান তাকসিম এ খান।

জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ওয়াসার মাত্র ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে। ৮০ শতাংশ এলাকাতেই পয়ঃলাইন নেই। ঢাকা শহরে প্রতিদিন তৈরি হওয়া ১৭৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্যের মধ্যে মাত্র ৩৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন করতে পারে ঢাকা ওয়াসা। বাকি ১৪০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য ঢাকা ও চারপাশের নদী, খাল এবং জলাশয়ে মিশছে। এর ফলে নগরীর পরিবেশ দূষণ এবং বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পুরো ঢাকার পয়োবর্জ্য লাইনের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ রোধে পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দিতে শোধনাগার প্রকল্প নেয় ওয়াসা। দাশেরকান্দি প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৫ সালে।

ওয়াসা জানায়, ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা-কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা শহরের পানি ব্যবস্থাপনা আমূল পরিবর্তন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে কতগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে শুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরকে একশতভাগ সুয়ারেজ নেটওয়ার্কে মধ্যে নিয়ে আসা এবং পয়ঃবর্জ্য ট্রিট করে নদীতে ফেলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হাতে নেওয়া হয়েছে।

দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার মাস্টার প্ল্যানের একটি জানিয়ে তাকসিম এ খান বলেন, পাঁচশ মিলিয়ন লিটার প্রতিদিন এখানে ট্রিটমেন্ট হয়। এই জাতীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চায়নাতেও নেই। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ট্রিটমেন্ট, ইনসেনেরেশন। সব ট্রিটম্যান্ট একই প্ল্যান্টে। চায়নাতে এরচেয়ে বড় থাকতে পারে কিন্তু একসাথে তিনটি সার্ভিস নেই। একটা ট্রিটমেন্টের প্ল্যান্টে এতগুলো জিনিস নেই। চায়না যতগুলো সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট করেছে তার মধ্যে এটা বেস্ট। এটার কর্মকাণ্ড উচ্চ মানের হয়েছে।’

রায়েরবাজার সুয়ারেজ স্টেটমেন্ট প্ল্যান্টে কাজ অনেক দূরে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ল্যান্ড অধিগ্রহণ করা। এই কাজটা আমাদের এগিয়েছে। উত্তরা সুয়ারেজ শোধনাগারের জমির অধিগ্রহণ করা প্রায় চূড়ান্ত। মিরপুর সুয়ারেজ স্টেটমেন্ট এর কাজ এগিয়ে চলছে। এটা ডিজাইন ড্রয়িং হয়েছে, ফাইনাল হয়নি।’

দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার হওয়ার পর রাজধানীর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পয়ঃট্রিট করতে পারা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মিনিমাম ৩৫ শতাংশ সুয়ারেজ কিলিং করতে পারব। কোনো ময়লা বা অপরিশোধীত যাতে করে ঢাকার চারপাশে জলাভূমি নদী, খালে যাতে না যায় এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।’

দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী বলেন, ‘এটা হাতিরঝিল সমন্বিত একটি প্রকল্প অংশ। হাতিরঝিল করার সময় এই প্রকল্পের ড্রাইভারসন লাইন করা হয়েছে। সেই ডাইভারশন লাইন দিয়ে রামপুরা খালে পয়ঃবর্জ্য ফেলা হতো। হাতিরঝিলকে বাঁচানোর জন্যই রামপুরা খালে ফেলানো হতো।’

‘আমাদের এখানে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেন করা হয়। প্রতিদিন এখান থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন স্লাট (ছাই) পাওয়া যায়। এই স্লাটকে যখন আমরা প্রসেসিং করি তখন ১০ শতাংশের মতো হয়। যা ৪৫-৫০ মেট্রিক টন হয়। এই স্লাটটা আমরা সিমেন্ট কোম্পানিকে দেই। প্রতিদিনই রুটিন মাফিক চেক করা হয়, পরিবেশবান্ধব থাকে। প্রতি তিন মাস পরপর আমরা ইন্ডিয়ান একটি কোম্পানি দিয়ে চেক করে থাকি। প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব। এখানে পয়ঃ সরাসরি না ফেলে আমরা শোধনের মাধ্যমে পানি ফেলছি।’

২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট দাশেরকান্দি প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। তবে ২য় সংশোধনীতে ডিপিপিতে এ প্রকল্পে ব্যয় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা। যে কারণে প্রকল্পেরে মোট ব্যায় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *