কঙ্গোর যুবকদের স্বাবলম্বী করছে শান্তিরক্ষীরা

কঙ্গোর যুবকদের স্বাবলম্বী করছে শান্তিরক্ষীরা

তাজা খবর:

আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর গোমা শহরের পাশেই অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যানইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট। এই কন্টিনজেন্টের ওয়ার্কশপে গত ৯ জুলাই সকালে কাজ করছিল স্থানীয় বেশ কয়েকজন কঙ্গোলিজ যুবক। কেউ ওয়েল্ডিং করছিল, কেউ নাটবোল্ট সেট করছিল। বিস্ময়কর হলো, কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ সময় তারা বাংলায় ‘চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে’ গানও গাইছিল।

কথা বলে জানা যায়, সেনাবাহিনীর ওয়ার্কশপে এভাবে নানা ধরনের কাজ করার মাধ্যমে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মমুখী বা স্বাবলম্বী হচ্ছে কঙ্গোর স্থানীয় যুবকরা। এর আগের দিনও কঙ্গোর ইতুরি প্রদেশের বুনিয়ায় ব্যানারডিবি-৪ কন্টিনজেন্টের ক্যাম্পে গেলে সেখানেও স্থানীয় বেশকিছু যুবককে কৃষিজাত কাজকর্মের প্রশিক্ষণ নিতেও দেখা যায়। সেখানে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন শস্য বা ফসলের বীজ বিতরণসহ কী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হবে সে বিষয়ে বাস্তবিক জ্ঞানদান করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বহুজাতিক (বিভিন্ন দেশের) বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা কঙ্গোর নর্দান সেক্টর কমান্ডার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, কঙ্গোর অসহায় জনগোষ্ঠীর বেকার বা উঠতি যুবকদের কর্মমুখী করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা নানা সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল দায়িত্বের বাইরেও পিছিয়ে পড়া কঙ্গোলিজ যুবকদের স্বাবলম্বী করতেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের এমন উদ্যোগ। সিভিল মিলিটারি কো-অপারেশনের (সিমিক) মাধ্যমে কারিগারি প্রশিক্ষণ, আত্মরক্ষার কৌশল ও শিক্ষামুখী করতে স্কুলপ্রতিষ্ঠাসহ এমন নানা সামাজিক ও মানবিক কাজের জন্য বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এখানে খুবই সমাদৃত। এজন্য বরাবরই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সাধুবাদ জানাচ্ছে স্থানীয় সরকার ও জাতিসংঘ।

গত ৯ জুলাই সকালে কঙ্গোর গোমায় নিয়োজিত ব্যানইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্টের ওয়ার্কশপে আলাপকালে স্পষ্টভাবে বাংলায় কথা বলেন গোমার স্থানীয় বাসিন্দা যুবক আলতামাস টাইগার। এ সময় আলতামাস সময়ের আলোকে বলেন, ‘কঙ্গোর গোমা শহরের পাশে আমার বাড়ি। বাংলাদেশকে আমি খুব ভালো ভালোবাসি। কারণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আমাকে ওয়ার্কশপের কাজ শিখিয়েছে। আমি অনেক টাকা রোজগার করি। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাকে লেখাপড়া শিখতেও সহায়তা করেছে। আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি কখনই বাংলাদেশকে ভুলব না।’

ব্যানইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুবুল হক সময়ের আলোকে বলেন, ‘এখানে বর্তমানে গোমার স্থানীয় ১৮ যুবক কাজ শিখছে। আর আগে অনেকে এখানে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাইরে নিজে ওয়ার্কশপ-কারখানা দিয়ে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে অর্থ আয় করছে। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনের বাইরে সিমিক কার্যক্রমের আওতায় স্থানীয়দের স্বাবলম্বী করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যানইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্টের ওয়ার্কশপে ওইসব বেকার যুবককে গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন, মেরামত, ওয়েল্ডিং, রিপেয়ারিং, প্রজেক্টের ঘর তৈরিসহ নানা কারিগরি প্রশিক্ষণ করানো হচ্ছে।

গত ৮ জুলাই ইতুরি প্রদেশের বুনিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যানআরডিবি কন্টিনজেন্টের ক্যাম্পে গেলে দেখা যায়, এই কন্টিনজেন্টের ক্যাম্পটির আয়তন অনেকটা সেনানিবাসের মতোই বড়। সেখানে সেনাবাহিনীর সবজি বাগানে কাজ করছিল স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ সময় কথা হয় হাসান কাসিম নামে এক যুবকের সঙ্গে। স্পষ্ট বাংলা ভাষায় হাসান কাসিম সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি বুনিয়া শহরঘেঁষা তাবোগা গ্রামে। প্রায় ১৬ বছর ধরে আমি এখানে চাষাবাদ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। আমায় দেখে আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবক এখানে কাজ শিখে কর্মমুখী হয়েছে। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই নিজ বাড়িতেও কৃষি কাজ বা ছোট ছোট খামার করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছি। এ কারণে বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা হয়ে গেছে।’

ব্যানআরডিবি কন্টিনজেন্টের মেজর রনি আহমেদ খান সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে বীজ এনে ক্যাম্প এলাকায় রোপণ করেছি। সেখানে আমাদের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে স্থানীয় বেশকিছু যুবক কৃষিজাত কাজ করে। তিনি বলেন, কঙ্গোর জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীরা প্রধানত কায়িক পরিশ্রম বেশি করে থাকে। সে কারণে স্থানীয় যুবকদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানকার যুবকরাও আগ্রহ নিয়ে কৃষি কাজ শিখছে বা করছে। এখানে কৃষিতে সম্ভাবনাও অবারিত।’

জাতিসংঘের কঙ্গোর (মনুস্কো) ইতুরি কার্যালয়ের উপপ্রধান তেওহনা উইলিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘সিমিক (সিভিল মিলিটারি কো-অপারেশন) কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এখানে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। স্থানীয়দের জন্য বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্কুল, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণসহ নানা সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড সত্যিই অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *