কামালের আঙুল-বিড়ম্বনার ৩৩ মিনিট

কামালের আঙুল-বিড়ম্বনার ৩৩ মিনিট

নিউজ ডেস্ক:

বয়সের কারণে হাঁটতে সমস্যা হলেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে এসেছিলেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন।

তবে বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় তলায় ভোটকেন্দ্রে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার পর ইভিএমে (কন্ট্রোল ইউনিট) ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে ৮২ বছর বয়সী প্রবীণ এই আইনজীবীকে।

ভোট কর্মকর্তাদের সহায়তায় শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারলেও নিজের বাজে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে পরে কামাল হোসেন ‘জটিল’ পদ্ধতিতে অন্যরা ধৈর্য ধরে ভোট দেবেন কিনা সেই প্রশ্ন রেখেছেন।

শনিবার সকাল ১০টা ৯ মিনিটে নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহ করা সাংবাদিক স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকারে করে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন কামাল হোসেন। গাড়ি থেকে নেমে লাঠিতে ভর করে ভোট কেন্দ্রের দিকে যান তিনি। এসময় কয়েকজন দুপাশ থেকে ধরে তাকে হাঁটতে সহায়তা করছিলেন।

কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে ভোট দিতে হবে, সেটা জেনে খানিকটা চিন্তার ভাঁজ পড়ে তার কপালে। সেসময় পাশ থেকে একজন বলেন, ‘আহা লিফট নেই না!’ আরেকজন পরামর্শ দেন, হুইল চেয়ারে বসিয়ে সবাই মিলে ধরাধরি করে তাকে ওপরে ওঠানোর।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠেই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন কামাল। একজন একটি চেয়ার এগিয়ে দিলে সেটায় বসে কয়েক মিনিট বিশ্রাম নেন তিনি। এরপর তৃতীয় তলায় উঠে ভোট কক্ষে ঢুকেই একটি বেঞ্চে বসে আবারও বিশ্রাম নেন।

এরপর ইভিএম মেশিনের কন্ট্রোল ইউনিটে প্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ দেন কামাল, কিন্তু তা না মেলায় তর্জনী আঙ্গুলের ছাপ দিতে বলেন এই কক্ষের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কাউসার-ই-জাহান।
কোনো আঙ্গুলের ছাপই মেশিনে না মেলায় চার-পাঁচবার চেষ্টা করেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ক্যামেরার সঙ্গে ডজন দুয়েক গণমাধ্যমকর্মী সেখানে উপস্থিত থাকায় একটু চাপেই পড়ে যান ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।

কিন্তু কামাল প্রতিবার আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পর কম্পিউটার মনিটরে লাল রঙে ভাসছিল ‘আবার চেষ্টা করুন’। এসময় কামাল হোসেনকে একটু রাগান্বিত দেখাচ্ছিল।

অনেক চেষ্টার পরেও ইভিএম মেশিনের কন্ট্রোল ইউনিট কামালকে শনাক্ত করতে না পারলে কম্পিউটারের মনিটরে লাল রঙে ভেসে উঠে ‘মিল পাওয়া যায়নি’। এসময় বেশ ক্ষুব্ধ দেখায় কামালকে।

কোনোভাবেই কামালের আঙ্গুল ইভিএম মেশিন শনাক্ত করতে না পারায় নিজের পিন নম্বর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। এরপর কম্পিউটার মনিটরে কামাল হোসেনের ছবি, বয়স, ভোটার নম্বর এবং বাসার ঠিকানা ভেসে উঠে। এরপর বাকী প্রক্রিয়া সেরে গোপন কক্ষে ঢুকে ইভিএমে নিজের ভোট দেন কামাল।

সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কাউসার-ই-জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কারো আঙ্গুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এরকম এক শতাংশ ভোটারের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

“উনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় আমার পিন নম্বর এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করি। পরে কম্পিউটারের মনিটরে উনার যাবতীয় তথ্য ভেসে উঠে, সেটা সবাই দেখেছেন। এজেন্টরা উনাকে শনাক্ত করার পর তার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”
কমালের ভোট দিতে কেন জটিলতা হল, সেই জিজ্ঞাসায় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, “উনার বয়স হয়ে যাওয়ায় কারণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলেনি। অনেক সময় আঙ্গুল মশৃণ হয়ে গেলেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলে না।”

ভোট দিয়ে খানিকটা ক্লান্ত কামাল ভোটকক্ষ থেকে বের হয়ে তৃতীয় তলার বারান্দায় একটি বেঞ্চে বসে আবারও বিশ্রাম নেন। এরপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামেন তিনি; তখনও দুইপাশ থেকে দুইজন তাকে ধরে হাঁটতে সহায়তা করছিলেন। পরে ভিকারুননিসার মূল ভবনের বাইরে একটি চেয়ারে বসে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

ইভিএমে ভোট দিয়ে কেমন লাগল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেক সময় লাগছে আরকি। আমার ভোট দিতে তো প্রথম পর্যায়ে তো ১০ মিনিট লেগেছে। আর খুঁজে বের করতে করতে হল জিনিসটা আধা ঘণ্টার মত লাগল। জিনিসটা খুব জটিল হয়েছে, যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। আমার আধা ঘণ্টা লেগেছে, অন্যরা ধৈর্য করে এগুলো (ভোট) দেওয়ার জন্য পারবে কি পারবে না সে প্রশ্ন থাকছে। এত জটিল করে দিচ্ছে যে মানুষ সহজে ভোট দিতে পারছে না।
ইভিএম নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “জনগণ ইভিএমের ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। তারা ভাবছে এটা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এজন্য ভোটাদের উপস্থিতি দেখে আমি হতাশ। এতে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই।”

বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ বলে জানান কামাল।
নির্বাচনের পরিস্থিতি কেমন দেখছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। আমি হতাশ। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে এই কেন্দ্রে ২৬০০ ভোটারের মধ্যে একশর কম ভোট নাকি পড়েছে। এটা থেকে বুঝা যায়, ইভিএমের ওপর মানুষের আস্থা নাই।”

“ইভিএমে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে কিনা, সেটা বোঝা যাবে পরে, এখন তো এটা বোঝা কঠিন। সবাই মিলে ভোট দেওয়া উচিত।”
এরপর সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন কামাল হোসেন।

ভিকারুননিস নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এই কেন্দ্রে দুই হাজার ৬৩৯ জন পুরুষ ভোটার। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৯১ জন ভোট দিয়েছেন।

ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভিভিআইপি এলাকা, মানুষ দেরিতে ঘুম থেকে উঠে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছি।”
কামাল হোসেনের ভোট দিতে বিড়ম্বনায় বিষয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, “উনার বয়স হয়েছে, হাত কাঁপছিল। এছাড়া অনেকের হাতের রেখা মুছে যাওয়ার কারণেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *