দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না : প্রধানমন্ত্রী

তাজা খবর:

রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। তিনি গতকাল সোমবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে যেখানে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়, সেখানেই দিনটির স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরেরও দাবি জানান।

সেদিনের হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতাকর্মীদের মানবঢাল প্রাণে বাঁচায় তাঁকে। কিন্তু নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী নিহত এবং প্রায় এক হাজার জন আহত হন, যার মধ্যে পাঁচ শতাধিক গুরুতর আহত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। আর জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। ২১ আগস্ট হামলার সেদিনকার সব আলামত নষ্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন তো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, তাঁর কী ভূমিকা ছিল? আহতদের চিকিৎসায়ও বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় এই হামলার সঙ্গে খালেদা-তারেক গং জড়িত।

এতে কোনো সন্দেহ নেই। মামলার তদন্তেও বেরিয়েছে। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত। খুনিদের জবানবন্দিতে ফুটে উঠেছে। আর ২১ আগস্টে খালেদা-তারেক জড়িত, এটাও প্রমাণিত হয়েছে।

গ্রেনেড হামলার শিকার যাঁরা এখনো শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে নিয়ে বেদনাময় জীবন যাপন করছেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের কাছে গিয়ে জিয়া পরিবারের এই অপকর্ম তুলে ধরতে বলেন যে কিভাবে এরা তাঁদের জীবনকে ধ্বংস করেছে। কিভাবে দেশে লুটপাট করেছে, কিভাবে দেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে, যার মূল হোতাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ তাদের দোসর জামায়াতে ইসলামী এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা এখনো তারা সে কাজই করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে জাতির পিতাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ হত্যার পরও নিহতের স্বজনদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না, কোনো মামলা পর্যন্ত করা যায়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। সেদিনের ভুক্তভোগী আজকের প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দেখি মাঝে মাঝে বাংলাদেশে মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কাদের শেখানো বুলি তারা বলেন?

জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে তাদের দীর্ঘ ৩৩টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ সভা সঞ্চালনা করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্টের শহীদদের স্মরণে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পরে দলের পক্ষ থেকেও আরেকবার সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এর পরই সেদিন নিহতের স্বজন এবং আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্তদের কিছু কারাগারে থাকলেও মূল হোতা তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, এর মূল হোতা তো বাইরে (বিদেশে পলাতক)। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে।

তিনি তারেক রহমানের সততার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তার সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, তার সুযোগ নিয়ে (ইউটিউব/সোশ্যাল মিডিয়ায়) লম্বা লম্বা কথা বলে। আর কত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে সেই টাকা খরচ করে। সাহস থাকে তো বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না, ওদেরকে ছাড়বে না।’

তিনি এ সময় ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যা এবং এরপর জয় বাংলা স্লোগান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘ওরা কিছু লোক দেখে লম্ফঝম্ফ করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চেনে নাই।’

ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দেওয়া, কর্মসংস্থান, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়াসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেই কাজ করে এবং জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘শুধু এটুকুই চাই, এ দেশের মানুষ সজাগ থাকবে। ওই খুনিদের হাতে যেন এ দেশের মানুষকে আর নিগৃহীত হতে না হয়। আর অগ্নিসন্ত্রাস ও জুলুমবাজি করে যেন এ দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

‘আল্লাহ যখন বাঁচিয়েই রেখেছেন, বারবার মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, তাই যতক্ষণ বেঁচে আছি এ দেশের মানুষের সেবা করে তাদের উন্নত জীবন দিয়ে যাব,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলাস্থলে দলের নেতাদের নিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ছবি : বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *