নিয়ম ভেঙে সিটি নির্বাচনে কূটনীতিকদের ‘অতি উৎসাহ’ কেন?

নিয়ম ভেঙে সিটি নির্বাচনে কূটনীতিকদের ‘অতি উৎসাহ’ কেন?

নিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়মের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচনের মতো স্থানীয় একটি নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ‘অতি উৎসাহ’ নিয়ে এরমধ্যেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তারা এ ধরনের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হতে পারবেন কিনা? এ নিয়ে মিশ্র মত রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তবে এত সব প্রশ্নের মধ্যেই বিদেশি কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দিয়ে তাদের জন্য নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিতর্কের শুরু হয় গত বুধবার ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসায় কূটনীতিকদের বিশেষ একটি বৈঠক নিয়ে। আগের দিন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আসার পর কূটনীতিকদের নিজেদের মধ্যে আবার বৈঠকে বসাকে অর্থপূর্ণ মনে করছেন অনেকে৷ গোপনে এ বৈঠক সম্পন্ন হলেও ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে দাবি করা হয়েছে, এটি বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনারদের মধ্যে নিয়মিত মাসিক বৈঠক ছিল।

এ অবস্থায় পরদিন বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আপত্তি জানায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। দূতাবাসে কর্মরতরা কীভাবে নির্বাচনে

পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোড অব কন্ডাক্ট ফর ইলেনমন অবজারভারের নিয়ম অনুযায়ী, শুধু দেশের ভেতরে কোনো সংগঠন ও আন্তর্জাতিক কোনো বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। এ হিসেবে কোনো দূতাবাসকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর নজির নেই।

এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারা যে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন, তাতে তারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য আচরবিধি মেনে চলবেন।

এ নিয়ে একই দিন বিকেলে হুঁশিয়ারি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, যে সব কূটনীতিকরা আচরণবিধি মানছেন না, তাদের ফিরে যেতে বলা হবে। কূটনীতির ভাষায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য খুব কঠোর একটা বার্তা বহন করে। সাধারণত পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোনো দেশের কূটনীতিকদের এভাবে ফিরে যেতে বলেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেখানে বাংলাদেশ বরাবরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়ে এসেছে, সেখানে এ ধরনের কঠিন বার্তা সম্পর্কের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাংলাদেশের আত্মসম্মান বেড়েছে, বাংলাদেশ এ বার্তাটিও জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে।

তবে কূটনীতিকরা এসব হুমকি, হুঁশিয়ারি খুব একটা আমলে নেননি বলেই মনে হচ্ছে। কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই পশ্চিমা ৯টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা এক যুক্ত বিবৃতিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানান, জনগণের ভোটের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে। একই সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ জানান। এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের শীর্ষ ব্যক্তিরা।

সম্প্রতি এতজন শীর্ষ রাষ্ট্রদূতের এ যুক্ত বিবৃতি গভীর অর্থ বহন করে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

এক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, কোড অব কন্ডাক্ট ফর ইলেনমন অবজারভারের নিয়মের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের এত উৎসাহ দেখে মনে হয় এর পেছনে তাদের কোনো এজেন্ডা রয়েছে।

তবে এর আগেই নির্বাচন কমিশন সরকারের জন নিরাপত্তা বিভাগকে আলাদা করে চিঠি দিতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তাদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী মার্কিন দূতাবাসের ১৮ জন বিদেশি এবং ০৯ জন দেশি, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ৫ জন বিদেশি এবং ৭ জন দেশি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫ জন বিদেশি, নেদারল্যান্ডসের ৫ জন বিদেশি, ১ জন দেশি, সুইজারল্যান্ডের ২ জন বিদেশি, ৪ জন দেশি, জাপানের ৩ জন বিদেশি, ২ জন দেশি, ডেনমার্কের ২ জন দেশি, ১ জন বিদেশি, নরওয়ের ২ জন বিদেশি, ২ জন দেশি, অস্ট্রেলিয়ার ২ জন বিদেশি এবং কানাডার ২ জন করে দেশি-বিদেশী কর্মকর্তা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *