বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বিরল খনিজের ভাণ্ডার

বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বিরল খনিজের ভাণ্ডার

তাজা খবর:

বঙ্গোপসাগরের তলদেশের ৩ হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই বিরল খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার। সন্ধান মিলেছে মোনাজাইট, জিরকন, রুটাইল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ফসফরাস, সালফেট ও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের মতো মূল্যবান সব খনিজ।

এ ছাড়া সাগরের তলদেশে সম্ভাব্য ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে, যা দিয়ে মিটবে নিজেদের ১০০ বছরের চাহিদা। বর্তমানে দেশে কেবল ১৪ বছরের গ্যাস মজুদ রয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে গবেষকরা এ তথ্য জানান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সমুদ্রে প্রায় ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল। অথচ গড়ে ৩০ নটিক্যাল পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতে পারছি। অধিকন্তু বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর ৪০ মিটারের কম গভীরতায় মাছ ধরার অনুমতি না থাকলেও তারা তা মানছে না। গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা না থাকায় এ দেশের জেলেরা উপকূলের কাছকাছি মাছ ধরে। তবে এ দেশের জেলেরাও যাতে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে আনতে পারে, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য শ্রীলংকা থেকে কয়েকজন জেলেকে আনা হচ্ছে।’

ড. শফিক বলেন, ‘হ্যাচারিতে পোনার খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার আর্টিমিয়া আমদানি করা হয়। অথচ তিন দশক আগেই এ দেশের বিজ্ঞানীরা সফলভাবে আর্টিমিয়া তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ দেশের বিজ্ঞানীরা অতীতে অনেক প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু সেগুলো মাঠপর্যায়ে কাজে লাগানো হয়নি। তাই সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে শুধু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেই হবে না, সেই প্রযুক্তিকে মাঠপর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে।’ সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ অর্থবছরের গবেষণা ফলসহ মোট সাতটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

বঙ্গোপসাগরের তলদেশে থাকা বিরল খনিজসম্পদের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপের ফল তুলে ধরেন সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভূ-তাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া। সেমিনারে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাগরের তলদেশে ৩ হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোনাজাইট, জিরকন, রুটাইল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ফসরাস, সালফেট ও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টসহ মূল্যবান খনিজ পদার্থের ভা-ার পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সাগরের তলদেশে সম্ভাব্য ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ১০০ বছরের চাহিদা মিটাতে পারব।’

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইতি রানী পোদ্দার। আলোচনায় আরও অংশ নেন পরমাণু শক্তি কমিশনের সৈকত খনিজ বালি আহরণ কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মাসুদ করিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হুদা, কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর কাশেম ও সুলতান আল নাহিয়ান, ওশানোগ্রাফি ডাটা সেন্টারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তানিয়া ইসলাম, ফিজিক্যাল ও স্পেস ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপক লোধ ও শাহীনুর রহমান, মৎস্য বিশেষজ্ঞ পলাশ খন্দকার, ইকোলাইফের ম্যানেজার মো. আবদুল কাইয়ুম, শিল্পোদোক্তা ওমর হাসান, সাংবাদিক আহমদ গিয়াস প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *