বিশেষ ফ্লাইটে দেশে আনা হচ্ছে ৫০০ জনকে

বিশেষ ফ্লাইটে দেশে আনা হচ্ছে ৫০০ জনকে

তাজা খবর:

অবৈধপথে ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায় উদ্ধার বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনছে সরকার। প্রাথমিক ধাপে দুটি চার্টার্ড ফ্লাইটে তাদের দেশে আনা হবে। প্রথম ফ্লাইটে লিবিয়ার বেনগাজি ও ত্রিপোলিতে থাকা ৩০০ জনকে ফেরত আনা হচ্ছে। দ্বিতীয় ফ্লাইটে তিউনিসিয়া থেকে আরও ২০০ বাংলাদেশিকে আনা হবে। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি সেখানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছিলেন। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে তারা দেশে পরিবারের কাছে আসার সুযোগ পাবেন।

এখনও দিনক্ষণ ঠিক না হলেও চলতি মাসেই তাদের আনা হচ্ছে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরত আনতে সব ধরনের সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও)। গতকাল বুধবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্য একটি দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সমকালকে বলেন, অবৈধপথে যারা ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে উদ্ধার হয়েছেন, তাদের আমরা ভাড়া করা বিমানে দেশে ফেরত আনছি। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারা, কীভাবে তাদের অবৈধপথে এত দূর নিল- সেই চক্রকেও বের করা হবে।

সংশ্নিষ্ট উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার সংশ্নিষ্ট প্রশাসনকে এরই মধ্যে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। করোনার কারণে ওই সব দেশের সীমান্তও বন্ধ। আইএমওর প্রতিনিধিরাও সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নাম-পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন। বর্তমানে তাদের কে কোথায় কী অবস্থায় আছেন, এর সর্বশেষ তথ্য জানার চেষ্টা করছে আইএমও।

অবৈধপথে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে সাগরে ডুবে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। আবার অনেক সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবিতও উদ্ধার করা হয়। করোনা মহামারিতেও অবৈধপথে বিদেশযাত্রা থেমে নেই। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে উত্তাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ১৭ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশির প্রাণ গেছে। নৌকায় অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে মারা যান তারা। তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছিল তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। এ ছাড়া জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের আরও ৩৮০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে। এর আগে গত ২৪ জুন ২৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। তাদের মধ্যে ২৬৪ জনই ছিলেন বাংলাদেশি।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন তিউনিসিয়ার অধিবাসীরা।

বিভিন্ন সময় ফেরত আসা বাংলাদেশিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান, ইউরোপে নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে মানব পাচারের একটি চক্র রয়েছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তাদের এজেন্ট রয়েছে। দালালদের কারও কারও কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। অনেক দেশের জঙ্গল ও মরুভূমিতে তাদের আস্তানা আছে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকে অনেক সময় স্বজনের কাছে দেশে মুক্তিপণও দাবি করে মানব পাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যরা। অর্থ না দিলে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে। বাংলাদেশ থেকে ১৮টি রুট ব্যবহার করে মানব পাচার করা হয় ইউরোপে। বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন ভূমধ্যসাগর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *