৭ নভেম্বর: ইতিহাসের কালো অধ্যায়ই বিএনপির জন্য বিজয় দিবস!
নিউজ ডেস্ক: নভেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মিশন শুরু হয় ৭ নভেম্বরের মধ্য দিয়ে। বিপ্লবের নামে সেদিন ৩ জন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এরা হলেন- খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম, কেএন হুদা বীরউত্তম এবং এটিএম হায়দার বীরবিক্রমকে।
স্বাধীনতাবিরোধী দলের জন্য ৭ নভেম্বর বিশেষ উৎসবের দিন হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি “মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস”। ক্ষমতার লালসায় জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন মিলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে ক্ষমতায় আসার এই দিনটি ইতিহাসে কালো দিন বলে পরিচিত। যদিও সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া রাজনৈতিক দলসহ ৭১-এর যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এই দিনটি বিজয় দিবসের মতো পালন করে। কিন্তু ইতিহাস বলে তা আসলে বাঙালি জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়।
সে সময়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে কোন চেইন অব কমান্ড ছিল না। বিদেশি সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস উল্লেখ করেন- এদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমনকি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়। এ রকম জঘন্য ঘটনায় ভরপুর ছিল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরসহ পরবর্তী ঘটনাগুলো। আবার অনেক ঘটনায় হয়তো রিপোর্টের নজর এড়িয়ে গেছে কিংবা সংরক্ষণে রাখা হয়নি।
তথ্য সূত্র বলছে, ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের হাত থেকে চিরদিনের জন্য দায়মুক্ত থাকার ব্যবস্থা হিসেবে অত্যন্ত সুচতুরভাবে দিনটিকে ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’ রূপে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে জিয়ার একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ। সিপাহী বিদ্রোহে অংশ নেয়া সিপাহীরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোন ব্যাটালিয়নে ছিল না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। আর বিশেষ মহলের নেপথ্যে কারা ছিল তা জাতির নিকট অত্যন্ত স্পষ্ট।
ঘটনার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট মতামত দেয়া যায় যে, ৭ নভেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে ছিল কলঙ্কস্বরূপ। প্রাজ্ঞজনদের মতামতের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার দুরভিসন্ধি তথা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার প্রয়াসে পাকিস্তান ফেরত সৈনিকদের দিয়ে সেনা হত্যা তথা মুক্তিযোদ্ধা হত্যার মিশনে নামে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা চক্র। আর সেই চক্রের নায়ক বলা হয় জেনারেল জিয়াকে।
কাজেই এটি বুঝতে কারও বাকি নেই, পরবর্তীতে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াবার কিংবা স্বৈরশাসককে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস যাতে কেউ দেখাতে না পারে সেরকম অন্তর্নিহিত বিশ্লেষণ করেই অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান তথা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। আর সুকৌশলে ও অনেকটা নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয় দিয়ে বিএনপি এই দিনকে বিজয় দিবসের মতোই গুরুত্ব দিচ্ছে। যা ন্যক্কারজনক।